লাইফষ্টাইল ডেস্ক : সবজি হিসেবে কাঁচাকলা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। পটাশিয়াম-বহুল এই সবজিতে আছে ভিটামিন, স্টার্চ, ফাইবার, এবং সামান্য পরিমাণে প্রোটিন। কাঁচাকলা হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমায়, কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়, বিপাক প্রক্রিয়া ও ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়ায়। কাঁচা কলাকে হয়তো অনেকেই পছন্দ করেনা। বাচ্চারাও কাঁচা কলার নাম শুনলে কেমন একটা করে। কাঁচা কলা দিয়ে যেমন তরকারি হয় তেমনি চপ-কাটলেটও বানানো যায়। নানা গুণে গুণান্বিত এই কাঁচা কলার মুখরোচক রেসিপি (কাঁচা কলার রেসিপি) দিয়ে আপনার খাবার টেবিলের জনগণকে খুশি করতে চাইলে ঝটপট পড়ে ফেলুন আজকের লেখাটি।
জেনে নিন ৬ টি সুস্বাদু কাঁচা কলার রেসিপি, যা দিয়ে এক থালা ভাত নিমেষেই সাবাড় শুধু হবে না, একেবারে আঙুল চেটেপুটে খাবেন।
কাঁচা কলার নিরামিষ
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলা – ৩টা
রসুন – গোটা ১টা
পেঁয়াজ (মোটা করে কাটা) – আধা কাপ
কাঁচা মরিচ (ফালি) – ৪টা
হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
চিংড়ি মাছ (ছেঁচা) – কয়েকটা
জিরা গুঁড়া (টালা) – আধা চা চামচ
ধনেপাতা (কুচি) – ১ কাপ
তেল – পরিমাণমতো
লবণ – পরিমাণমতো
তৈরীর পদ্ধতিঃ
প্রথমে কাঁচা কলার খোসা ফেলে দিয়ে কলাগুলোকে মোটা মোটা করে কাটুন। একটি সসপ্যানে ৩-৪ কাপ পানি, হলুদ গুঁড়া, লবণের সাথে কলার টুকরাগুলোকে সিদ্ধ করুন। আস্ত রসুনের খোসা ছাড়িয়ে সেগুলো দুই/তিন টুকরো করে কেটে রাখতে হবে আগেই। সসপ্যানে প্রথম বলকটা আসলে তাতে কাটা রসুন, কাটা পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, এবং ছেঁচা চিংড়ি দিয়ে দিন।
আরো পড়ুন: অত্যন্ত সুস্বাদু কাঁচা কলার চিপসের রেসিপি
ভালমত সিদ্ধ করার পর চামচ দিয়ে কলার টুকরাগুলোকে হালকা ভেঙে দিন। মিশ্রণটা বেশি পাতলা বা ঘন হতে দেয়া যাবে না, একটু পাতলা থাকতেই সসপ্যানটা নামিয়ে ফেলুন। এবার আরেকটি প্যানে অল্প তেলে ছেঁচা রসুন ভাজতে থাকুন বাদামি না হওয়া পর্যন্ত। রসুন বাদামি হয়ে গেলে কলার মিশ্রণটা ঢেলে দিন৷ দুই-তিন মিনিট নাড়ুন, তারপর ওতে জিরা গুঁড়া আর ধনেপাতা কুচি দিয়ে আরো দুই-তিন মিনিট নাড়ুন। এরপর নামিয়ে গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
কাঁচা কলা ভাজি
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলা – ৩-৪টা
হলুদ – ১ চা চামচ
সরিষা – ১/৪ চা চামচ
জিরা – আধা চা চামচ
কাঁচা মরিচ – ২/৩ টা (চাইলে এটার পরিবর্তে আধা চা চামচ লাল মরিচ গুঁড়া নিতে পারেন)
আদা – আধা ইঞ্চি
রসুন (কোয়া) – ৪টা
পেঁয়াজ (কুচি) – বড় ১টা
ধনেপাতা (কুচি) – অল্প
গরম মশলার গুঁড়া – আধা চা চামচ
তেল – ২ টেবিল চামচ
তৈরীর পদ্ধতিঃ
রান্না শুরু করার আগে ব্লেন্ডারে কাঁচা মরিচ, রসুন, এবং আদার পেস্ট বানিয়ে নিন। কলাগুলোকে প্রথমে খোঁসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন, এরপর সেগুলো টুকরো করে কেটে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এবার সসপ্যানে তেল গরম করে জিরা ও সরিষা বাদামি করে ভেজে নিন। এরপর তাতে আদা-মরিচ-রসুনের পেস্ট এবং হলুদ দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে কাঁচাকলা দিয়ে দিন। এবার এই মিশ্রণটাকে মাঝারি আঁচে ভাজতে থাকুন।
এবার কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ কুচি দিন, পেঁয়াজ বাদামি না হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। সবশেষে গরম মসলার গুঁড়া আর ধনেপাতা দিয়ে কম আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করে এরপর নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সাথে এই ভাজি খেতে দারুণ লাগবে।
কাঁচা কলা খোসার ভর্তা
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলার খোসা – ১ কাপ
চিংড়ি মাছ (হালকা ভাজা) – ১/৪ কাপ
কাঁচা মরিচ/শুকনা মরিচ – ৪ টা
পেঁয়াজ কুচি – ১/৪ কাপ
লবণ – স্বাদমতো
সরিষার তেল – স্বাদমতো
তৈরীর পদ্ধতিঃ
প্রথমে ভাল দেখে কয়েকটি কলা ভালমতো ধুয়ে নিন। এরপর এগুলোর খোসা ছাড়িয়ে খোসার ভিতরের আঁশ ফেলে দিন। তারপর খোসাগুলোকে কুচি কুচি করে কেটে সিদ্ধ করুন। চিংড়ি মাছ তেলে হালকা ভেজে নিন। এরপর এই ভাজা মাছের মধ্যে সিদ্ধ কলার খোসা, পেঁয়াজ কুচি, মরিচ, লবণ দিয়ে ভাজতে থাকুন। যখন বাদামি রং হয়ে আসবে তখন নামিয়ে নিন এবং বেটে নিন। বাটা হয়ে গেলে গরম ধোঁয়া উঠা ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
কাঁচা কলার দম
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলা – ৫টা
আলু (নতুন) – ৩০০ গ্রাম
পেঁয়াজ (বাটা) – ২ টেবিল চামচ
পেঁয়াজ (কুচি) – আধা কাপ
আদা বাটা – ১ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
ধনে গুঁড়া – আধা চা চামচ
জিরা গুঁড়া (ভাজা) – ১ চা চামচ
গরম মসলা – ১ চা চামচ
লবণ – স্বাদমতো
তেজপাতা – ২টা
এলাচ – ২টা
গোল মরিচ – ৭-৮টা
কাঁচা মরিচ – ৫-৬টা
টমেটো (কুচি) – ২টা
ধনেপাতা (কুচি) – ১ মুঠো
লেবুর রস – ১ চা চামচ
চিনি – আধা চা চামচ
তৈরীর পদ্ধতিঃ
প্রথমে কলাগুলোর খোসা ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে নিন, এরপর হলুদ মাখিয়ে হালকা সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। আলুর খোসা ছাড়িয়ে আলু সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে রাখুন। এবার একটা ননস্টিক প্যানে তেল সামান্য গরম করে তাতে পেঁয়াজ বাটা ও পেঁয়াজ কুচি দুটোই একসাথে হালকা বাদামি করে ভাজুন। সামান্য পানি দিন, এরপর তাতে হলুদ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, রসুন বাটা, আদা বাটা, পরিমাণমত লবণ, তেজপাতা, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন।
আরো পড়ুন: সুস্বাদু মেজবানি মাংস রান্নার রেসিপি
এবার এতে টমেটো কুচি দিয়ে টমেটোর সাথে মিশ্রণটা আবারও ভালো করে কষান। কষানোর মাঝে একটু চিনি মিশিয়ে নিবেন। তেল যখন উপরে ভেসে উঠবে তখন সিদ্ধ করা আলু আর আধা কাপ গরম পানি দিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন। এরপর সিদ্ধ কলার টুকরোগুলো দিয়ে নেড়ে নিন এবং অল্প আঁচে দিয়ে ছয় থেকে সাত মিনিট ঢেকে রাখুন। ঝোল শুকিয়ে তেল উপরে উঠে আসলে ধনেপাতা কুচি, আস্ত কাঁচা মরিচ, ভাজা জিরা গুঁড়া, এবং গরম মসলা দিয়ে দুই মিনিট ঢেকে রাখুন। নামনোর আগে লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। এই মজাদার কাঁচাকলার দম গরম ভাতের পাশাপাশি রুটি বা পরোটার সাথেও খেতে পারবেন।
কাঁচা কলার ঝাল
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলা – ৫টা
আলু – ১টা
টমেটো – ১টা
জিরা গুঁড়া – আধা টেবিল চামচ
গোল মরিচ গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
এলাচ (গুঁড়া) – ২টা
কাঁচা মরিচ – ১টা
গরম পানি – ২ কাপ
লবণ – স্বাদমতো
হলুদ গুঁড়া – আধা টেবিল চামচ
সরিষার তেল – ৫ টেবিল চামচ
কালোজিরা – ১ চিমটি
তৈরীর পদ্ধতিঃ
প্রথমে কলা আর আলু খোসা ছাড়িয়ে নিন। এরপর কলা, আলু, টমেটো কেটে ভালো করে ধুয়ে নিন। আলুটা শুধু হালকা সিদ্ধ করে রেখে দিন। কড়াইতে তেল দিয়ে তাতে কালোজিরা, কলা, টমেটো, সিদ্ধ আলু, লবণ, হলুদ, কাঁচা মরিচ দিয়ে ভালো করে ভেজে নিন। কিছুক্ষণ পর তাতে জিরা গুঁড়া, গোলমরিচ গুঁড়া দিয়ে নেড়েচেড়ে গরম পানি ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ এভাবে সিদ্ধ করার পর এলাচ গুঁড়া উপরে ছড়িয়ে দিয়ে পাঁচ মিনিট ঢেকে রাখুন। পাঁচ মিনিট পরে একটু নেড়েচেড়ে নামিয়ে নিন। এই কাঁচাকলার ঝাল গরম ভাতের সাথে খেতে অমৃত লাগবে।
কাঁচা কলার কাটলেট
যা যা লাগবেঃ
কাঁচা কলা – ৪টা
আদা বাটা – আধা চা চামচ
রসুন বাটা – আধা চা চামচ
ধনে গুঁড়া (ভাজা) – আধা চা চামচ
জিরা গুঁড়া – আধা চা চামচ
এলাচ গুঁড়া – এক চিমটি
লবণ – পরিমাণমতো
ধনে পাতা (কুচি) – পরিমাণমতো
কর্নফ্লাওয়ার – ২ টেবিল চামচ
কাঁচা মরিচ (কুচি) – ১ চা চামচ
পেঁয়াজ বেরেস্তা – ২ টেবিল চামচ
তেল – পরিমাণমতো
তৈরীর পদ্ধতিঃ
কাঁচা কলাগুলো ধুয়ে মাঝখানে কেটে দুই ভাগ করুন। এরপর এগুলো সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে খোসা ছাড়িয়ে চটকে তার মধ্যে বাকি উপকরণগুলো দিয়ে মাখিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ হাতের তালুতে নিয়ে কাটলেটের শেপে বানান, তারপর ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে নিয়ে নিন।
সবটা ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে নেয়া হলে ফ্রিজে ৩০ মিনিট রেখে দিন। ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে ফ্রিজ থেকে নামানো কাটলেটগুলো অল্প আঁচে ভাজতে থাকুন। বাদামী রং হয়ে এলে নামিয়ে টিস্যু পেপারের উপর রাখুন। এই মজাদার কাটলেট ভাত কিংবা পোলাওয়ের সাথে খেতে পারবেন, আবার বাচ্চাদের স্কুলের টিফিনেও দিতে পারেন।