প্রতিবেদন: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার অসময়ের তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। অসময়ের তরমুজ উৎপাদন করে কৃষক লাভবান হয়েছেন। প্রতিকেজি তরমুজ তারা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। ঘেরপাড়ে বসেই কৃষক তরমুজ বিক্রি করেছেন। তরমুজ বিক্রির কাঁচা টাকা ঘরে তুলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে । অসময়ের তরমুজ চাষ তাদের আর্থিক সমৃদ্ধির পথ দেখিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি, কলাবাড়ি, কুশলা, হিরণ, রাধাগঞ্জ, সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের ঘেরপাড়ে গোড়া পদ্ধতিতে ২০০ কৃষক ১৬ হেক্টর জমিতে অসময়ের তরমুজের চাষাবাদ করেন। প্রতি হেক্টরে কৃষক ৪৫ মেট্রিক টন তরমুজের ফলন পেয়েছেন। সেই হিসেবে কৃষক ৭২০ মেটিক টন তরমুজ উৎপাদন করেছেন। প্রতি কেজি তরমুজ তারা গড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছে। কোটালীপাড়ার কৃষক কমপক্ষে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার অসময়ের তরমুজ বিক্রি করেছেন।
কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় আরো বলেন, অসময়ের তরমুজ স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন একটি ফসল। ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই এ তরমুজের ফলন পাওয়া যায়। বাজারে এ তরমুজের চাহিদা খুব বেশি। তাই কৃষক বাড়তি দামে তরমুজ বিক্রি করে লাভবান হন। ঘেরপাড়ে সবজি চাষ করলে কৃষক প্রতি কেজি সবজি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন।
কিন্তু সবজির পরিবর্তে তরমুজ করে কৃষক প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকী করণ করতে চাই। তাই কৃষককে দিয়ে উচ্চ মূল্যের ফসল ফলাতে আগ্রহী করে তুলছি। এভাবে কৃষকের আয় আমরা দ্বিগুণ করে দিতে উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারের লক্ষ্য আনুয়ায়ী আমরা ২০৪১ সালের মাধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেব।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশাস্ত সরকার বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলা বিল বেষ্টিত একটি উপজেলা। এ উপজেলায় ঘেরে মাছ ও ধান চাষ করা হয়। কৃষক ঘেরপাড়ে সারা বছর কৃষক শাক, সবজি, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করেন। এ বছর কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নে ঘেরপাড়ে গোড়া পদ্ধতিতে অসময়ের ব্লাক সুইট জাতের তরমুজের চাষ হয়েছে। এখান থেকে ছোট চাষি কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তরমুজ তাদের একটি বড় আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। তাদের দেখাদেখি অনেকেই আগামীতে লাভজনক অসময়ের তরমুজ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের আমবাড়ি গ্রামের কৃষক মৃত্যুঞ্জয় পান্ডে বলেন, ৮ বিঘা ঘেরের ৩ বিঘা পাড়ে তরমুজ চাষ করেছিলাম। তরমুজের বাম্পার ফলন পেয়েছি। বিঘা (৫২ শাতাংশের ) প্রতি আমি তরমুজের ১৫০ মণ ফলন পেয়েছি। ৩ বিঘায় ৪৫০ মণ তরমুজ ফলিয়েছি। শাক, সবজির তুলনায় তরমুজের ফলন বেশি। প্রতিকেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৫৫ টাকা বিক্রি করেছি। ৩ বিঘায় তরমুজ চাষে সড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখান থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। লাভজনক তরমুজ চাষ দেখে অনেকেই আগামীতে তরমুজ চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
একই গ্রামের কৃষক নিশিকান্ত হালদার বলেন, তরমুজের ভালো ফল ও দাম পেয়েছি। আমি আমার ১০ বিঘার ঘেরপারের ৪ বিঘায় তরমুজ উৎপাদন করে অন্তত ১০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি।
একই গ্রামের কৃষক প্রদীপ হালদার বলেন, ৫ বিঘার ঘেরের ২ বিঘা পাড়ে তরমুজ উৎপাদন করে খরচ বাদে ৩ লাখ টাকা ঘরে তুলেছি। তরমুজ চাষে অন্য যে কোন ফসলের তুলনায় লাভ বেশি। কিন্তু অসময়ের তরমুজের একটু বেশি পরিচর্যা ও যত্ন নিতে হয়।
Related Post:
ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে পাটকাঠির কদর
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষি -এর গুরুত্ব