নিউজ ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও জেলায় বাণিজ্যিকভাবে বেড়েছে পাটকাঠির কদর । পাটের পাশাপাশি পাটকাঠি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। সদর উপজেলা জগন্নাথপুর, রহিমানপুর, সালন্দর, আউলিয়াপুর, রুহিয়া, বিলপাড়া, হরিপুর উপজেলার কাঁঠালডাঙ্গীসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাট ধোঁয়ার পর বেশ যতেœর সঙ্গে পাটকাঠি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা। গ্রামীণ সড়কের পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে চলছে পাটকাঠি শুকানো কাজ।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় এ বছর ৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬১ হাজার ১৫ টন আঁশ। সদর উপজেলার বিলপাড়া গ্রামের পাটচাষী শহীদুল ইসলাম জানান, পাটকাঠির চাহিদা ভালো থাকায় দূর-দুরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা বাড়ি এসে কিনে নিয়ে যায়। এতে বেশ ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক বাহার উদ্দিন বলেন, ‘গত কয়েক বছর আগেও ঘরের ছাউনি, বাড়ির চারপাশে বেড়া অথবা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে পাটকাঠির ব্যবহার হতো। তখন তেমন চাহিদা ছিল না। কিন্তু পাটকাঠি এখন আর ফেলনা হয়ে পড়ে থাকে না। এ পাটখড়ি দেশের বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড মিলে যাচ্ছে। চাহিদা বাড়ায় আঁশের চেয়ে পাটকাঠি বিক্রি করে বেশি লাভবান হচ্ছি।’
সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ভগতগাজী এলাকার প্রান্তিক কৃষক দীনেশ রায় জানান, ৫০ শতক জমির পাট থেকে তিনি যে পাটখড়ি পেয়েছেন তা ৯ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। একই এলাকার কৃষক বলরাম ঘোষ জানান, একশত মোটা পাটকাঠি ৭০০-৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে একই পরিমাণ ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হতো।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবেশবান্ধব পাটে রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। পাটের আঁশের পাশাপাশি কাঠিরও রয়েছে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার। বিশ্ব বাজারে বাণিজ্যিকভাবে পাট কাঠির রয়েছে বাড়তি চাহিদা। ফলে পাটকাঠিও ভালো দামে বিক্রি করছেন কৃষকেরা।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. আবদুল জলিল বলেন, এবার পাটের ভালো ফলন হলেও শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকেরা কিছুটা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিলেন। তবে সে ঝুঁকি সামলিয়ে উঠছেন তারা। বাজারে পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠির ভালো দাম রয়েছে।
এ অঞ্চলের পাটকাঠি দেশের বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড মিলে সরবরাহ করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, পাটকাঠি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে কৃষকদের বিশেষত প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে পাটকাঠির (পাটকাঠির কদর) সঠিক ব্যবহারে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এ জেলার পাটশিল্প। তৈরি হতে পারে বিশ্ব বাজারে পণ্য রপ্তানির নতুন দুয়ার।
Related Post:
পাহাড়ে হানিকুইন আনারস -এর আগাম ফলনে কৃষকের মুখে হাসি